২০২১ সালের জন্য কয়েকটি ছোট ব্যবসার ধারণা

২০২০ সালে শুরু। তারপর চলে গিয়েছে কতদিন। অথচ করোনা কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায়নি। মাঝেমধ্যে তার চোখ রাঙানির খবর পাওয়া যায়। করোনা চলে না গেলেও করোনা কিন্তু অনেকেরই জীবন এলোমেলো করে দিয়ে গেছে। অনেকেরই সাধের চাকুরি চলে গিয়েছে, কেউ বা ব্যবসায় লস খেয়ে পথে বসেছে। কাজ হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ বেকার জীবন যাপন করছে।

যারা বেকার জীবনযাপন করছেন, যারা চাকুরী হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছেন কিংবা যারা শেষ বারের মতো চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা করার কথা ভাবছেন আজকের এই লেখাটি/ভিডিওটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। প্রিয় ভিউয়ার্স/পাঠক আমাদের অনেকেরই স্বপ্ন থাকে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার। অনেকেই অনেক ব্যবসায়িক ধারাণা নিয়ে ঘুরেও বেড়ান। কিন্তু সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় শেষ পর্যন্ত তারা সফলতার মুখ দেখতে পারেন না।

এইসব স্বপ্নবাজ মানুষের জন্যই আমি আজকে কিছু চমৎকার ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে আলোচনা করবো। ২০২১ সালের জন্য এমন কয়েকটি ছোট ব্যবসার ধারণা নিয়ে আজকে আলোচনা করবো যা কিনা আপনার জীবনে সামান্য হলেও পরিবর্তন আনবে। এই অনন্য ব্যবসায়িক ধারণাগুলোকে আপনি এক একটা টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন।

২০২১ সালের কয়েকটি সেরা ছোট ব্যবসার ধারণা

১।ফার্নিচার/কাঠমিস্ত্রিঃ কাঠের সুন্দর আসবাবপত্র তৈরির প্রতি যদি আপনার আগ্রহ থাকে কিংবা শখের বশেও যদিও এসব করে থাকেন তবে এটাকে আপনি একটা ছোট ব্যবসা হিসেবে দাঁড় করাতে পারেন। সৌখিল ফার্নিচারের প্রতি মানুষের আগ্রহ কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। আপনার যদি সৃষ্টিশীল মন থাকে তবে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য। আসবাবপত্র কিন্তু এখন আর শুধু দোকানে বিক্রি হয় না অনলাইনেও বিক্রি করতে পারেন। ফেসবুকে পেজ খুলে বা ওয়েবসাইট বানিয়ে আপনি নিজেই কাঠের এসব সৌখিল আসবাবপত্র অনলাইনেও বিক্রি করে প্রচুর অর্থ ইনকাম করতে পারেন।

২। হ্যান্ডিম্যানঃ হ্যান্ডিম্যান বলতে সাধারণত এমন কাজকে বুঝায় যেখানে কোন ব্যক্তি যিনি বাড়ির ভিতরে বা বাইরে জিনিসপত্র মেরামত এবং তৈরি করতে দক্ষ এবং যিনি নিজের বাড়িতে স্বাধীন মতো কোন ব্যবসা পরিচালনা করেন। আপনার যদি ছোট ছোট কিছু কাজ করার দক্ষতা থাকে যেমন, টুকটাক ইলেকট্রিসিটির কাজ, কম্পিউটার/মোবাইল মেরামত করা দক্ষতা, তাহলে এসবকে কেন্দ্র করে আপনি একটা ছোট ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন। এজন্য আপনার এলাকায় বা পাড়ার মোড়ে ছোট্ট একটা দোকান ভাড়া নিয়েও এই ব্যবসাটা করতে পারেন।

৩। ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনারঃ বর্তমানে প্রযুক্তির এই যুগে গ্রাফিক ডিজাইনারদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানী/সংস্থা ওয়েবসাইট ডিজাইন থেকে শুরু করে ব্লগ গ্রাফিক্স এবং আরও অনেক  ধরণের প্রকল্পের জন্য অনেক কোম্পানীই কিন্তু অভিজ্ঞ গ্রাফিক ডিজাইনার সন্ধান করে। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইন জানেন তবে এটা হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম একটা কর্মক্ষেত্র।

৪। ফ্রিল্যান্স ডেভেলপারঃ বিভিন্ন ছোট ছোট ব্যবসায়ের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট বড় প্রকল্পগুলোর জন্য ডেভেলপার হিসেবে প্রযুক্তিগত সহায়তা করা, মানসম্পন্ন ওয়েব সাইট তৈরি করা/ডেভেলপ করাসহ ওয়েব ডেভেলপারদের বর্তমানে উচ্চ চাহিদা রয়েছে। যদি আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করা, ডেভেলপ করার প্রতি এমন প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থাকে তবে ফ্রিল্যান্স ডেভেলপার হিসেবেও কিন্তু আপনি প্রচুর অর্থ ইনকাম করতে পারেন।

৫। ফ্রিল্যান্স রাইটারঃ আপনার যদি একটা সৃজনশীল মন থাকে এবং লেখালেখির প্রতি আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা থাকে তবে আপনি ফ্রিল্যান্স রাইটার হিসাবে অনলাইনে বাড়তি অর্ ইনকাম করতে পারেন। ব্লগ পোস্ট, ম্যাগাজিনের জন্য নিবন্ধ এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের জন্য  লিখেও ইদানিং প্রচুর টাকা ইনকাম করা যায়। বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও তার সমাধান, শিক্ষা বিষয়ক তথ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে যদি আপনার আগ্রহ থাকে তবে এইসব বিষয়ে লিখে তা নিজস্ব ব্লগে বা ওয়েসাইটে প্রকাশ করে এ্যাডসেন্সের মাধ্যমেও আপনি টাকা ইনকাম করতে পারেন।

৬। অনুবাদঃ আপনি কি কোন বিদেশী ভাষায় অনর্ল কথা বলতে পারেন? অনুবাদ করতে পারেন বিদেশি সাহিত্য, কিংবা যে কোন লেখা? যদি এর উত্তর হ্যাঁ হয় তবে অনুবাদক হিসাবে আপনি বাড়তি টাকা ইনকাম করতে পারেন। দেশে অনুবাদকের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে প্রকাশনা সংস্থায়। দোভাষী হিসেবেও আপনি টাকা ইনকাম করতে পারেন।

৭। ইন্টেরিওর ডিজাইনারঃ এমন অনেক লোক রয়েছে যাদের ঘর এবং ঘর সজ্জা করার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাব এবং বাড়ির সজ্জার জন্য প্রয়োজনীয়  সরঞ্জামাদি কেনার আগ্রহ রয়েছে তবে কোথা থেকে শুরু করবেন বা কিভাবে গৃহ সজ্জা করবেন তা জানেন না। জানেন এমন কিছু লোক যাদেরকে বলা হয় ইন্টেরিওর ডিজাইনার। যদি আপনার ভেতর সৃজনশীলতা থাকে তবে পেশা বা ব্যবসা হিসাবে ইন্টেরিওর ডিজাইনার মন্দ নয়। ইন্টেরিওর ডিজাইন বর্তমানে খুব চাহিদা সম্পন্ন ব্যবসা। আপনি এই ব্যবসা করেও প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারেন।

৮। ট্যুর গাইডঃ আপনি যদি আপনার দেশ বা কোন রাজ্যের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জানা থাকে এবং দেশকে ভালোবেসে যদি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমন করতে ভালো লাগে তবে ট্যুর গাইড হওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।  ট্যুর গাইড হতে হলে অবশ্যই ভ্রমন সম্পর্কিত কাজগুলো আপনাকে ভালভাবে করতে সক্ষম হতে হবে।  ট্যুর গাইডে সফল হতে হলে এমন ট্যুর অফার করুন যা আপনার দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে যায়।

৯। পোশাক/বুটিকের মালিকানাঃ পোশাক বা বুটিকের ব্যবসা বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটা ব্যবসা। আপনি যদি নিজের ফ্যাশন সাম্রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখেন তবে স্থানীয় বুটিক দিয়েই শুরু করুন না কেন? প্রথমেদিকে খুব ছোট করেই না হয় শুরু করুন। শুরু করতে পারেন আপনার স্থানীয় বাজারে একটা শোরুম চালু করে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় পেজ খুলে কিংবা অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এবং যারা এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের নিয়ে একটা সংগঠন গড়ে তুলে আপনার ব্যবসাটিকে স্থায়ী এবং মজবুত করতে পারেন।

১০। ফুড ট্রাকঃ এমন অনেক তরুণ - তরুণী আছেন যাদের স্বপ্ন থাকে একটা রেস্তোরার মালিক হওয়ার। কিন্তু প্রয়োজনীয় টাকা, লোকবলের অভাবে হয়তো অনেকেরই স্বপ্ন সফল হয় না। তাদের জন্য একটি উত্তম ধারণা হতে পারে এই ফুড ট্রাক। এটা করতে পারলে একই সঙ্গে দুইটা লাভ। দেশীয় খাবারের সঙ্গে পরিচিতিটা যেমন বাড়বে তেমনি ভবিষ্যতে ব্যবসার পরিধি বাড়ার সম্ভাবনাও থাকে।

১১। ক্যাটারিং সার্ভিসঃ এই ব্যস্ত সময়ে অনেকেই অফিস-আদালতে, কর্মক্ষেত্রে, বিভিন্ন সুপারমলে সঠিক সময়ে খাবার নিতে পারেন না। আপনার যদি রান্নার হাত ভালো থাকে এবং দুচার জন দক্ষকর্মী থাকে তবে ক্যাটারিং সার্ভিস দিতে পারেন। এবং পরবর্তীতৈ ধীরে ধীরে বৃহত্তর ইভেন্টগুলোর জন্যও কাজ করার চেষ্টা করতে পারেন। প্র্রথম দিকে এই ব্যবসায় হযতো একটু কষ্ট হতে পারে তবে পরিচিতিটা যখন বাড়বে তখন কিন্তু অর্ডার আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই চলে আসবে আপনাকে আর কষ্ট করে কোথাও যেতে হবে না।

১২। জিমের মালিকঃ বিশ্বায়নের এই যুগে নানান ব্যস্ততায় অনেকেই নিজের ফিটনেসের প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ পান না। তার ওপর সুপরিসর ফাঁকা জায়গার অভাব তো রয়েছেই। শহর এলাকায় আপনার যদি জিম তৈরি করার মতো নিজস্ব জায়গা থাকে কিকবক্সিং জিম, যোগ স্টুডিওস, ক্রসফিট নিজের একটি জিম খোলার মাধ্যমেও প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারেন।

১৩। ডে কেয়ার সেন্টারঃ বর্তমান যুগে ডে কেয়ারের উচ্চ চাহিদা রয়েছে। যদিও এখন ন্যানি এবং আয়া  জনপ্রিয়, তবে অনেকেরই তাদের বেতন দিয়ে রাখার মতো সামর্থ নেই। বাংলাদেশে এটা নতুন হলেও অনেকের কাছেই এখন পরিচিত ব্যবসা। সাপ্তাহিক কর্মদিবস বা ব্যস্ত দিনে আদরের সন্তানটিকে যত্ন  বা পরিচর্যার ডে কেয়ার সেন্টারে নিয়ে আসেন। ডে কেয়ার ব্যবসাটি মূলত সৃজনশীল এবং সেবামূলক ব্যবসা।

১৪। কফি শপঃ মুহূর্তেই শরীর চাঙ্গা করতে কফি এর বিকল্প কিছু নেই। যেকোন ছোট-খাট বৈঠকে অনেকেই চা-কফি অর্ডার করে থাকেন। বর্তমানে শুধু শহরে নয় অনেক গ্রামাঞ্চলে আজকাল কফি শপের দেখা মেলে। এর কারণ হয় তো এটাই যে, কোন বড় আকারের দোকান প্রয়োজন হয় না তেমনি খুব বেশি মুলধনও লাগে না। এই ব্যবসায় ইনভেস্ট কম কিন্তু লাভ বেশি। ব্যবসা হিসাবে কফি শপও একটা ভালো আইডিয়া।

১৫। হেয়ার ড্রেসিং বা মেকআপ আর্টিস্টঃ স্বল্প পুঁজির ব্যবসা হিসাবে হেয়ার ড্রেসিং বা মেকআপ আর্টিস্ট ব্যবসা হতে পারে অনেকটাই উত্তম। কয়েকদিনের ট্রেনিং নিয়ে আপনি এই ব্যবসা করতে পারেন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন