ফুটপাতঃ কয়েকটি লাভজনক ব্যবসার ধারণা

মুল আলোচনায় যাওয়ার আগে বলে নেওয়া ভালো ফুটপাতের ব্যবসা সবার জন্য নয়। এর জন্য মানসিকতা দরকার। অনেকের কাছেই বিষয়টা অসম্মানজনক বলে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু আমরা একবারের জন্যও ভাবি না যে, ছোটখাট কোন ব্যবসা বা কাজ যাই হোক না কেন তাকে অসম্মানজনক বলে মনে করার কোন কারণ নেই। প্রকৃতপক্ষে দিনের পর দিন বেকার থাকাটাই অসম্মানজনক।

ফুটপাতের ব্যবসায় কিছু সুবিধাজনক দিক আছে। যেমনঃ

ক) পুঁজি কম লাগে

খ) একাই পরিচালনা করা যায়

গ) লোকবল লাগে না। ফলে টাকা সাশ্রয় হয় না

ঘ) ভাড়া বা সিকিউরিটি মানি দিতে হয় না

এসব দিক বিবেচনা করলে বলা যায়, ফুটপাতের ব্যবসা তুলনামুলক লাভজনক।

বাংলাদেশে চাকুরীর বাজার অনেক কঠিন। চাকুরী যেনো সোনার হরিণ, সহজে ধরা দেয় না। আর যাদের প্রাতিষ্ঠানিক বা কারিগরি শিক্ষার গন্ডিটা কম তারা চাকুরীর পরিবর্তে একটু বড় হলে বিভিন্ন কাজে যোগদান করে আর কেউবা বেকার জীবনযাপন করে অনেকেই চাকুরী পায় না ফলে ছোট  ছোট ব্যবসা করে তাদের জীবন চালাতে হয়। আবারও বলতে হয়, আমরা যেনো ভুলে না যাই যে, কোন কাজই ছোট নয় এবং হালাল উপায়ে উপার্জিত অর্থ প্রত্যেকের জীবনে উন্নতি বয়ে আনে।

ফুটপাতের ব্যবসায় সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো অল্প টাকা বিনিয়োগে বেশি লাভ। মাত্র ৫,০০০ বা ১০,০০০ টাকায় শুরু করা যায় এই ব্যবসা। আজ কথা বলবো ফুটপাতে করা যায় এমন কয়েকটি ব্যবসার ধারণা নিয়ে।

(১)পপকর্ন ব্যবসাঃ কম সময়, কম পুঁজি এবং প্রচুর লাভ এটাই হলো পপকর্ন ব্যবসার ‍মূলভিত্তি। এই ব্যবসার জন্য দোকান বা বড় কোন জায়গার প্রয়োজন হয না। শুধুমাত্র একটি ছোট গাড়িতে (ঠেলাগাড়ি জাতীয়) পপকর্ন তৈরি করে আপনি ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন৷ স্কুল-কলেজের গেটে, বাজারে পর্যটকদের ভিড় হয় এমন স্থানে, এই পপকর্নের দোকান ব্যবসা করতে পারেন।

(২) ফুসকা/চটপটি ব্যবসাঃ স্কুল - কলেজ গেটে, লোক সমাগম হয় এমন স্থান বা পার্কে, বাজারে, বাসস্ট্যান্ড, রাস্তার মোড়, মেলা ইত্যাদি স্থানে এই ব্যবসা খুব চলে। বিকাল থেকে রাত এ এই ব্যবসায় বেচাকেনা হয় সব থেকে বেশি।

(৩) ছোটদের খেলনাঃ ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের কাছে খেলনার চেয়ে বড় উপহার আর কিছু হয় না। প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার পাশাপাশি ইচ্ছে করলে মাটির তৈরি খেলনাও বিক্রি করতে পারেন। চকবাজার থেকে পাইকারি দামে ছোটদের খেলনা কিনতে কিনতে পারবেন।

(৪) ভাজাপোড়াঃ আপনার যদি একটা ছোট ভ্যান এবং গ্যাসের ‍চুলা থাকে তবে ফুটপাতে ভাজাপোড়া’র ব্যবসা করতে পারেন। সিংগাড়া, সমুচা, বেগুনী, আলু’র চপ ইত্যাদি বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় মুখরোচক খাবার। এখানে পুঁজিও লাগে কম আবার লাভও বেশি।

(৫) মোবাইল গ্যাজেটঃ দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য মোবাইল অ্যাপস যেমন আসছে তেমনি আসছে অসংখ্য স্মার্টফোন গ্যাজেট। বর্তমানে একটি জনপ্রিয় ব্যবসা হতে পারে এই মোবাইল গ্যাজেট। হেডফোন,

প্রভৃতি মোবাইল গ্যাজেট আপনি ফুটপাতেই বিক্রি করতে পারেন। ভ্যানে ওপর অথবা যাদের ভ্যান নেই তারা ফুটপাতে পাটি বা চট বিছিয়ে এই ব্যবসাটি করতে পারেন।

(৬) শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্টঃ খুব অল্প টাকায়, ভ্যান অথবা ফুটপাতে চট বা পাটি বিছিয়ে আপনি এই ব্যবসাটি করতে পারেন। বর্তমানে খুবই জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। লাভও প্রচুর।

(৭) আইসক্রিম ব্যবসাঃ শীত কিংবা গরমে যে কোন সময়েই চাইলেই আপনি এই ব্যবসাটি করতে পারেন।

(৮) কাচাবাজার ব্যবসাঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় একটা ব্যবসা কাচাবাজার। লাভও হয় প্রচুর। তবে খুবই সাবধানে করতে হয় যাতে সবজিতে পচন না ধরে।

(৯) ঝালমুড়ি’র ব্যবসাঃ মাত্র ১,৫০০ থেকে ২,০০০ টাকায় এই ব্যবসা শুরু করা যায়। অনেক মুখরোচক একটি খাবার। পার্কে, বিনোদন মূলক স্থানে এই ব্যবসা করতে পারেন।

(১০) বাদাম ব্যবসাঃ ঝালমুড়ি’র মতোই আপনি ইচ্ছে করলে এই ব্যবসাও করতে পারেন।

(১১) পিঠা বিক্রিঃ খুবই জনপ্রিয় একটি ব্যবসা। শীতকালে বেশি বিক্রি হলেও সারাবছরই চলে। অল্প পুঁজিতেই বেশি লাভ হয়।

(১২) ফলের দোকানঃ আমাদের দেশে বছর জুড়েই বিভিন্ন ধরনের ফল পাওয়া যায়। ছোট - বড় সবাই ফল পছন্দ করে বিধায় অল্প পুঁজি নিয়ে যে কোন লোকই এই ব্যবসা করে স্বাবলম্বি হতে পারে। প্রাথমিক অবস্থায় মাত্র দুই-তিন হাজার টাকা নিয়েই এই ব্যবসায় নেমে পড়তে পারেন।

(১৩) প্রসাধনীঃ প্রসাধনী’র ব্যবসাও আপনি ফুটপাতে করতে পারেন। সাধারণত মার্কেটের সামনে, গার্লস স্কুল/কলেজের সামনে, পার্কে এই ব্যবসা বেশ ভালো জমে ওঠে।

ফুটপাতে ব্যবসায় সাবধানতাঃ ফুটপাতের ব্যবসায় সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। আপনি চাইলেও হুট করে ফুটপাতে কোথাও বসে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। কারণ ফুটপাতে যেখানে আগে থেকেই যারা ব্যবসা করতেছে তারা বাঁধা দেবে। আবার পুলিশী ঝামেলা তো আছেই, তাদেরকে কিছু দেওয়ার পরেও মাঝেমধ্যে দৌড়ানীর ওপর থাকতে হয়।

1 টি মন্তব্য: