অবসর সময়ে করা যাবে এমন কিছু ব্যবসায়িক আইডিয়া

আধুনিক যুগে বিশেষ করে এই করোনা কাল এসে ব্যবসার ধারণা কিন্তু অনেক পাল্টে গেছে।  বর্তমানে ব্যবসা বলতে শুধু দোকান –পাট খুলে বসে থাকাাকে বোঝায় না। যাদের হাটে-গঞ্জে, মোড়ে, বাজারে কোন দোকান নেই তারাও কিন্তু ব্যবসা করে আসছেন।  ঘরে বসেই তারা এই ব্যবসাগুলো করে আসছেন। বর্তমানে ব্যবসা শুরু করার অর্থ এই নয় যে আপনার নিজের দিনের কাজটি কিংবা যে কাজটি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন সেটা ছেড়ে দিতে হবে। আপনি যদি বর্তমান পেশার পাশাপাশি অন্যকোন কাজ করে সামান্য অতিরিক্ত অর্থোপার্জন করতে চান, বা একটি খণ্ডকালীন ব্যবসায শুরু করতে চাচ্ছেন যা পরবর্তীতে কিনা বৃহত আকারে শুরু করা যেতে পারে এমন কিছু ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে আজকের এই লেখা।

প্রিয় পাঠক আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারে এমন ১০ টি পার্ট-টাইম ব্যবসায়িক ধারণা নিয়ে আজকের লেখায় আলোচনা করব যা কিনা আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন। তো চলুন জেনে আসি বিস্তারিত


) রি- সেলার হোনঃ আপনি যদি আপনার অতিরিক্ত সময়ে কোন ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবেন তবে একজন রিসেলার হওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন। বাংলাদেশে এমন অনেক সাইট এবং অন্যান্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস রয়েছে যার মাধ্যমে আপনি ঘরে বসে নতুন নতুন পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এগুলো আপনার নিজের অনলাইন স্টোর থেকেও কিন্তু বিক্রি করতে পারেন। এর জন্য প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি কম্পিউটার অথবা একটা স্মার্ট ফোন। মূল বিষয়টি 'ল রি-সেলার হতে গেলে গ্রাহকরা যে আইটেমগুলো চায়, যে আইটেমগুলোর বাজার চাহিদা আছে সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। আপনি খুব সহজেই এই আইটেমগুলো অনলাইনে অল্প দামে কিনে আপনি এগুলো বিক্রি করে লাভ করতে পারেন। আরেকটি বিকল্প ' পাইকার বা স্থানীয় উৎপাদনকারীদের সন্ধান করা যাদের পণ্যগুলো কিনে আপনি অনলাইনে পুনরায় বিক্রয় করতে পারেন। এই খণ্ডকালীন আয়ের ধারণাটি আপনার সময়সূচী, বাজেট এবং ইনভেন্টরির আকারে ছোট করা যেতে পারে।

 

) রান্না বা বেকিংয়ের ব্যবসা শুরু করুনঃ আপনার যদি বেকিং বা রান্নার দক্ষতা থাকে তবে খুব সহজেই আপনার অবসর সময়কে কাজ লাগিয়ে অর্থ উর্পাজন করতে পারেন। সাজানো - সুন্দর কেক, ক্যাটারিং এবং বেকারী পণ্য বিক্রয় আপনার এলাকায় অর্থোপার্জনের বিকল্প উপায় হতে পারে। আপনি যদি স্থানীয়ভাবে খাদ্য সরবরাহ বা বিক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেন তবে আপনাকে খাদ্য প্রস্তুতের নিয়মগুলো তথা রান্নার প্রণালী সম্পর্কে ভালো করে শিখতে হবে। যদি এমন কোন খাবার বা পানীয় আইটেম থাকে যা আপনার নিজস্ব রেসিপি দিয়ে তৈরি এবং গ্রাহকরাও এটা কেনার জন্য বারবার আগ্রহ দেখায়, তবে আপনি অদূর ভবিষ্যতে একদিন এই পার্টটাইম ফুড ব্যবসাটি একটা নামকরা ব্র্যান্ডে পরিণত করতে সক্ষম হতে পারেন। তবে এর জন্য প্রয়োজন ধৈর্য্য।



)টাকার জন্য লিখুনঃ কথাটা শুন হয়তো আপনাদের অদ্ভুত লাগছে। টাকার জন্য আবার লিখতে হবে? হ্যাঁ, আপনি এখন থেকে টাকার জন্য লিখবেন। অনলাইন বিভিন্ন নিবন্ধ লিখে  এবং ব্লগিং করে পেশাদার লেখা লিখেও আপনি অর্থ উর্পাজন করতে পারেন। অনুবাদ করে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে লিখে এবং নির্দিষ্ট কিছু অন্যান্য বিষয়বস্তু ওপর লিখে আয় করতে পারেন। আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে লেখাগুলো প্রকাশ করে এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারেন। যেহেতু লেখালেখির কাজগুলো দিন বা রাতের যে কোনও সময় করা যায়, তাই এটি সবার জন্য একটি ভাল খণ্ডকালীন ব্যবসায় হতে পারে।

 

). একজন শিক্ষক/শিক্ষিকা হনঃ আপনি যদি কোন একাডেমিক বিষয়ে অভিজ্ঞ হন এবং মানুষকে শিক্ষা দেওয়ার মতো ক্যাপাসিটি থাকে তবে শিক্ষার্থীদের পড়িয়েও আপনি অর্থ উর্পাজন করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের পড়ানো ও বুঝানোর দক্ষতা যদি আপনার থাকে তবে টিউটরিং এর মতো লাভজনক খণ্ডকালীন ব্যবসায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন। আর মনে রাখাবেন এটা করার জন্য কিন্তু কোন বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয় না।

 

) তথ্য বিপণনের ব্যবসা শুরু করুনঃ কিভাবে ওজন কমানো যায়, ক্যারিয়ারের বিল্ডআপ কিভাবে করবেন? বাচ্চাদের মানসিক বিকাশে করণীয়, কিভাবে পড়ালেখা করতে হবে? ক্যারিয়ার এ্যাডভাইস, মোটিভেশনাল কথাবার্তা ইত্যাদি অফুরন্ত বিষয়ের যে কোন একটিতে আপনি তথ্য রেডি করে পণ্য তৈরি করে প্যাসিভ ইনকাম করতে পারেন। -বুক, সিডি, ভিডিও, ব্লগ, ইউটিউবিং বা অন্য কোনও ফর্ম্যাটের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞের ন্যায় তথ্য সরবরাহ করে পুরো সময়ের চাকরি করার পাশাপাশি একটি প্যাসিভ ইনকাম কিন্তু আপনি খুব সহজেই করতে পারেন।

 

) শিল্প কারুশিল্প বিক্রয়ঃ আপনার যদি একটা শিল্পিত মন তবে আপনি বাড়িতে বসেও অবসর সময়ে কিন্তু বাড়তি অর্থ ইনকাম করতে পারেন। একটু পরিশ্রম করলেই শিল্পী এবং কারুশিল্পের লোকদের কাছে যারা কিনা আর্ট পছন্দ করে তাদের কাছে আপনার শিল্প কারুশিল্পের পণ্যসমূহ বিক্রয় করে উপার্জন করার জন্য প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এজন্য আপনি স্থানীয় আর্টস কমিউনিটির সাথে জড়িত হতে পারে এবং বিভিন্ন শিল্প মেলা বা ক্রাফ্ট শোতে আপনার জিনিসপত্র বিক্রয় করে বাড়তি অর্থ ইনকাম করতে পারেন।

 

) হাউজ ক্লিন বিজনেসঃ যদিও এই ধারণাটি এখনও নতুন তবুও হাউজ ক্লিন বিজনেসের মাধ্যমেও বাড়তি ইনকাম করতে পারেন। আপনি আবাসিক বা ব্যবসায়িক পরিচ্ছন্নতার সার্ভিসগুলো বাছাই করুন। শহর এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে বুয়া সরবরাহ করেও ইনকাম করতে পারেন। এটি একটি খণ্ডকালীন ব্যবসা যা পরবর্তীতে কর্মচারীদের সাথে একটি পূর্ণকালীন ব্যবসায়ও হতে পারে।



) গাড়ি/বাড়ি মেরামত ব্যবসা শুরু করুনঃ বর্তমানে গাড়ি/বাড়ি মেরামতের ব্যবসা খুবই লাভজনক একটি ব্যবসা।

 

) এ্যাফিলিয়েটেট মার্কেটিংয়ে জড়িত হনঃ এ্যাফিলিয়েটেট মার্কেটিং হলো যখন গ্রাহকরা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে কোনও বিজ্ঞাপন বা লিঙ্কে ক্লিক করে কোনও ব্যবসায় থেকে পণ্য বা সেবা কেনেন, সেখান থেকে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম প্রচুর পরিমাণে আপনাকে অ্যামাজনের মতো ছোট ব্যবসায়িক সাইট বা মেগা-খুচরা বিক্রেতাদের ক্লিক-মাধ্যমে লিঙ্কগুলি থেকে লাভ করতে দেয়।



১০) প্রাকৃতিক পণ্য বিক্রি শুরু করুনঃ বিষাক্ত এবং রাসায়নিক মুক্ত পণ্য কিন্তু বর্তমানে অনেক গ্রাহক খুঁজে থাকেন। প্রাকৃতিক এবং আয়ুর্বেদিক প্রসাধনীর যুগ আবারো ফিরে আসতে শুরু করেছে। বর্তমানে অনেক ক্রেতাই তাদের পছন্দের ক্ষেত্রে আয়ুর্বেদিক পণ্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে। ত্বক এবং চুলের যত্নের জন্য প্রাকৃতিক পণ্যের পাশাপাশি খাদ্যাভাসেও পরিবর্তন আনছে। আপনার পণ্য কাস্টমারের কাছে বিক্রয় করার আগে বন্ধু, পরিবার এবং অন্যান্য ব্যক্তিদের যারা এগুলো নিতে ইচ্ছুক তাদের সৎ ও সুন্দর মতামতের জন্য কিছু পণ্য বিনামূল্যে নমুনা হিসেবে দিতে পারেন। মনে রাখবেন প্রাকৃতিক পণ্য বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স বা অনুমতিপত্রের প্রয়োজন হতে পারে।  আপনাকে মেনে চলতে হয় এমন কোনও স্বাস্থ্য বিধি রয়েছে কিনা তা জানতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন