সমর শক্তিতে ইউক্রেনের চেয়ে কতটা এগিয়ে আছে রাশিয়া?

ইউক্রেন ঐতিহ্যগতভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ। ৩০ বছর আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির সময় এটি বর্তমান রাশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের যুগ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এবং সামরিক ইউনিট ইউক্রেনের অংশে চলে আসে। ২০১৪ সালে যখন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হন তখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল।




ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের সাথে সাথেই ইউক্রেনে রাশিয়া বিরোধী সরকার চলে আসে। এর ফলে ইউক্রেনের রুশ-ভাষী অঞ্চলে উত্তেজনা দেখা দেয়।

অতপর রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ আক্রমণ করে এবং নিজেদের সঙ্গে সংযুক্ত করে নেয়। সে সময় ইউক্রেনীয় সৈন্যরা রুশ সেনাদের রুখতে প্রাণপণে যুদ্ধ করলেও তারা সফল হতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর মনোবল অটুট থাকলেও তাদের অস্ত্রের অভাব রয়েছে। 

বর্তমান যুদ্ধের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন, ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেন মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক সংস্থা ন্যাটোর সদস্য হতে চায়। এতে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ অনেক বেড়েছে। রাশিয়া চায় না ন্যাটো তার সীমান্তে প্রবেশ করুক। ইউক্রেনের কারণে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য শত্রু দেশ রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আর এতেই ক্ষুব্ধ তারা।

সম্প্রতি রাশিয়অ ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন বলছে, তারা বিনাবাধায় কাউকে এক খণ্ড জমিও দখল করতে দেবে না, প্রয়োজনে লড়তেও রাজি।

টানটান উত্তেজনার মধ্যে গোটা বিশ্বের নজর এখন রাশিয়া-ইউক্রেনের দিকে। কী হবে সেখানে? রাশিয়া আক্রমণ করলে ইউক্রেন কি তা ঠেকাতে পারবে? তাদের কি রয়েছে সেই শক্তি?

চলুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক রাশিয়া ইউক্রেনের সামরিক শক্তির পার্থক্য কতটা?

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষণকারী গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের সবশেষ তথ্যমতে, রাশিয়ার সৈন্য রয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার, ইউক্রেনের মাত্র দুই লাখ। তবে উভয় দেশের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে আরও আড়াই লাখ করে। রাশিয়ার আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আড়াই লাখ, ইউক্রেনের ৫০ হাজার।

বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া দ্বিতীয়। ১৪০ দেশের এ তালিকায় ইউক্রেন রয়েছে ২২তম অবস্থানে।

সমরাস্ত্রের ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। রাশিয়ার আকাশযান রয়েছে মোট হাজার ১৭৩টি, ইউক্রেনের মাত্র ৩১৮টি। রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ৭৭২টি, ইউক্রেনের ৬৯টি।

রাশিয়ার হেলিকপ্টার রয়েছে হাজার ৫৪৩টি, এর মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৫৪৪টি। অন্যদিকে ইউক্রেনের হেলিকপ্টার ১১২টি, অ্যাটাক হেলিকপ্টার ৩৪টি।

রাশিয়ার কাছে ট্যাংক রয়েছে ১২ হাজার ৪২০টি, ইউক্রেনের হাজার ৫৯৬টি। আমর্ড ভেহিকেল রাশিয়ার রয়েছে ৩০ হাজার ১২২টি, ইউক্রেনের ১২ হাজার ৩০৩টি। রাশিয়ার স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি হাজার ৫৭৪টি, ইউক্রেনের হাজার ৬৭টি। রাশিয়ার মোবাইল রকেট প্রজেক্টর রয়েছে হাজার ৩৯১টি, ইউক্রেনের মাত্র ৪৯০টি।

সামরিক নৌযানের দিক থেকেও অনেক অনেক এগিয়ে রাশিয়া। রাশিয়ার কাছে ৬০৫টি সামরিক নৌযান থাকলেও ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র ৩৮টি।

রাশিয়ার কাছে একটি বিশাল বিমানবাহী রণতরী রয়েছে। ইউক্রেনের কাছে তা নেই। রাশিয়ার কাছে ৭০টি সাবমেরিন থাকলেও ইউক্রেনের বহরে একটিও নেই।

ইউক্রেনের কোনো ডেস্ট্রয়ার নেই, যা রাশিয়ার রয়েছে ১৫টি। ইউক্রেনের ফ্রিগেট রয়েছে একটি, রাশিয়ার রয়েছে ১১টি। মাইন ওয়ারফেয়ার নৌযান ইউক্রেনের একটি থাকলেও রাশিয়ার রয়েছে ৪৯টি। রাশিয়ার করভেট রয়েছে ৮৬টি, যেখানে ইউক্রেনের রয়েছে মাত্র একটি।

এর বাইরে, রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। কিন্তু ইউক্রেনের কাছে ধরনের কোনো অস্ত্র নেই। রাশিয়ার এস-৪০০ নামে অত্যন্ত শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। ইউক্রেনের কাছে এমন কিছু নেই।

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন