কীভাবে দ্রুত চাকরি পাবেনঃ দ্রুত চাকুরি পাওয়ার জন্য ১০ টি টিপস

 লক্ষ লক্ষ বেকারের দেশে দ্রুত চাকরি পাওয়া কিন্তু অনেক কঠিন একটি কঠিন কাজ। বিশেষ করে যখন দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। তবে সত্যি বলতে কি দেশে এমনও বেকার রয়েছেন যারা চাকুরি নামক সোনার হরিণের খোঁজ করতে করতে জুতার সুকতলা পর্যন্ত ক্ষয় করে ফেলছেন। কিন্তু চাকুরি আর তাদের কাছে ধরা দেয় নি। শেষ পর্যন্ত নিজেকে ভাগ্যের কাছে সঁপে দিয়েছেন।  কিন্তু চেষ্টায় যে ভাগ্যকে পরিবর্তন করা যায় এটা অনেকেই জানেন না।

আপনি যদি এইসব লোকের মতো হন তাহলে আপনার জন্য দ্রুত চাকুরি খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। চাকুরি খোঁজার সময় আপনি এমন কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন যা আপনাকে দ্রুত একটি নতুন অবস্থান খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।

আজকে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো সেগুলো খুবই ছোট হলেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। 

কীভাবে দ্রুত চাকরি পাবেন সেই বিষয়ের ওপর আমি ১০ টি টিপসের একটি তালিকা তৈরি করেছি যা কিনা আপনাকে দ্রুত চাকরি পেতে সহায়তা করতে পারে।


আপনার জীবনবৃত্তান্ত পরিমার্জন থেকে শুরু করে ইন্টারভিউ ফলো-আপ পর্যন্ত, এই কৌশলগুলো আপনাকে আপনার পছন্দের চাকরি খুঁজে পেতে এবং দ্রুত নিয়োগ পেতে সাহায্য করবে।


) জব বোর্ড বা চাকুরির সাইডগুলোর সঠিক ব্যবহারঃ- bdjobs.com, alljobs.teletalk.com.bd, bdjobstoday.com,   skill.jobs, jagojobs.com  এর মতো প্রধান চাকরির ওয়েবসাইটগুলোয় একটি 'অ্যাডভান্সড সার্চ' অপশন রয়েছে যেখানে আপনি কীওয়ার্ড, লোকেশন, চাকরির শিরোনাম, বেতন এবং অন্যান্য অনেক অপশন দ্বারা আপনার পছন্দ মতো চাকুরির খুঁজতে পারেন।

আপনি যদি অভিজ্ঞ ব্যক্তি হন তাহলে কাজের দায়িত্ব এবং আপনার পূর্বের কাজের অভিজ্ঞতার সাথে মানানসই এমন কয়েকটি কীওয়ার্ড লিখুন যাতে আপনি প্রতিটি সাইটের অনুসন্ধান কার্যকারিতা দক্ষতার সাথে এবং আপনার সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।

এইসব ওয়েবসাইটে চাকুরি খোঁজার সময় একটা বিষয় খেয়াল রাখেবেন, আর তা হলো প্রতিটা চাকুরির জন্য কিন্তু আপনি আবেদন করবেন না। কারণ এতে করে কিন্তু আপনার অদক্ষতার পরিচয় মেলে। এর পরিবর্তে, আপনার যোগ্যতার সাথে মেলে এমন চাকরি খুঁজুন। এতে করে আপনার একটি ইন্টারভিউয়ের জন্য নির্বাচিত হওয়ার আরও ভাল সুযোগ থাকবে। আপনি চাকরি খোঁজা শুরু করার আগে, আপনি কোন ধরনের চাকরি খুঁজছেন সেই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, আপনার সময় অধিক মূল্যবান, যখন কিনা আপনার লক্ষ্য দ্রুত চাকরি পাওয়া। আপনি সত্যিই উপভোগ করবেন এমন চাকুরিগুলোতে আবেদন করতে সময় নিন এবং আপনার সময়কে বুদ্ধিমানের সাথে ব্যবহার করুন এবং আপনার সাথে মেলে এমন পজিশনের জন্য আবেদন করুন।


আকর্ষণীয় উপযোগী কভার লেটারঃ- কভার লেটার লেখার সময় আপনাকে মনে রাখতে যে, কভার লেটার কিন্তু অতীতের কোন বিষয় নয়। কভার লেটারটিকে অবশ্যই জীবন্ত করে তুলতে হবে। একই কভার লেটার সব পদের আবেদনের জন্য ব্যবহার করবেন না। আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার প্রতিটি পদের জন্য কভার লেটার পরিবর্তন করা জরুরী। অর্থাৎ প্রতিটা পদের জন্য আলাদা আলাদা কভার লেটার লিখবেন।

এখন কভার লেটারে কি কি বিষয় এ্যাড করতে হবে? চলুন জেনে আসি।

আপনার যোগ্যতার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিন, আপনার সাফল্যের সুনির্দিষ্ট উদাহরণ প্রদান করুন এবং আপনার দক্ষতা কীভাবে কোম্পানিকে উন্নতি করতে সাহায্য করবে সে সম্পর্কে কথা বলুন। মনে রাখবেন, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ জানতে চান যে, আপনার কি এমন যোগ্যতা আছে যা আপনাকে অন্য আবেদনকারীদের থেকে আলাদা করে? তাই আপনার ইউনিক স্কিলগুলো কভার লেটারে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আপনাকে কীভাবে এই চাকুরির জন্য উপযুক্ত করে তোলে তা হাইলাইট করতে আপনার কভার লেটার ব্যবহার করুন।

 

) আপনার সিভি ফোকাস করুন এবং আবেদন করতে থাকুনঃ- চাকরির জন্য কোথাও সিভি জমা দেওয়ার আগে আপনি ভেবে নিন যে, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে প্রভাবিত করার জন্য আপনার কাছে মাত্র কয়েক সেকেন্ড সময় আছে, যা আপনাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য বেছে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখবেন, নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ আপনার কভার লেটারের প্রথম প্যারায় লেখা কোম্পানির জন্য আপনি কী করতে পারেন তাও দেখতে চান।

যাই হোক, আপনার সিভিটি এমন ভাবে লেখা উচিৎ যা কিনা আপনার যতটা সম্ভব কাজের সঙ্গে মিলে যায় অর্থাৎ যে পদের জন্য আপনি আবেদন করছেন তার সাথে মিলে যায়।

আবেদন করার আগে ভেবে নিন যে, আপনি আপনার স্বপ্নের চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। আর তাই সিভি সাবমিট করার আগে আবার চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি ভালো করে দেখে নিন। নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি চাকরির প্রয়োজনীয়তার সাথে আপনার জীবনবৃত্তান্ত এবং কভার লেটারে আপনার যোগ্যতার সাথে সবকিছুর মিল আছে।

আপনার আবেদন বা সাক্ষাৎকারের জন্য কর্তৃপক্ষের ফোন বা মেইলের অপেক্ষা করবেন না। এই অপেক্ষা শুধুমাত্র আপনার চাকরির অনুসন্ধানের সময়কে বাড়িয়ে দেবে। আর তাই একটা সংস্থা বা কোম্পানীর চাকুরির জন্য অপেক্ষা না করে আবেদন করতে থাকুন। এর ফলে সবচেয়ে খারাপ যেটা ঘটতে পারে তা হল আপনাকে হয় না বলা হবে অথবা একাধিক চাকরির অফারগুলোকে স্বইচ্ছায় আপনাকে ঠেলে দিতে হবে।

 

) আপনার পোশাক, চেহারা এবং ব্যক্তিত্বঃ- ইংরেজিতে একটা কথা আছে “dress for the job you want, not the job you have”.  আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই কথাটার কিছু সত্যতা আছে। মনে রাখবেন, ইন্টারভিউয়ের প্রথম কয়েক মিনিট প্রথম ইম্প্রেশনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যে ধরনের চাকরি এবং কোম্পানিতে আবেদন করছেন তার জন্য আপনি উপযুক্ত পোশাক পরেছেন তা নিশ্চিত করুন।

মুখস্থ করা উত্তর, ফেক হাসি, এবং আপনি যা মনে করেন তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে বলা এগুলে কিন্তু ইন্টারভিউয়ার শুনতে চায় না এবং এগুলো নিয়োগকর্তাকে বিভ্রান্ত করে। নিয়োগকর্তারা জানতে চান যে তারা কাকে নিয়োগ দিচ্ছেন এবং সেই ব্যক্তি যাকে তারা অফিসের কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

নিয়োগকর্তার নিকট আপনি এমন ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করুন যেনো তিনি আপনাকে পছন্দ করেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে যখন আপনাকে কোন প্রশ্ন করা হয়, তখন আপনি আপনার দক্ষতা অভিজ্ঞতার আলোকে তার উত্তর প্রদান করুন। মনে রাখবেন, আপনি যত বেশি বাস্তব তথ্য প্রদান করবেন, নিয়োগকর্তা তত বেশি জানতে পারবেন আপনি কতটা যোগ্য।

 

) ইন্টারভিউ এর শিষ্টাচার মনে রাখুনঃ- ইন্টারভিউ  এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ তবে গুরুত্বপূর্ণ ভুলগুলোর মধ্যে একটি হল আপনার সবর্শেষ কর্মস্থল বা বস বা সহকর্মীদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলা। ইন্টারভিউয়ার প্রথম যে জিনিসটি দেখতে চান তা হল আপনি যখন এগিয়ে যাচ্ছেন তখন তাদের কোম্পানি সম্পর্কে আপনি কী বলবেন।

চাকরির ইন্টারভিউয়ের পর ফলো-আপ করা অপরিহার্য। এটি চাকরির জন্য বিবেচিত হওয়ার জন্য আপনার কৃতজ্ঞতা দেখানোর একটি উপায়। ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাকে নির্দিষ্ট উদাহরণের সাথে ব্যাক আপ করাও কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা, সাফল্য এবং শেখার অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করুন এবং কর্মক্ষেত্রে এমন প্রজেক্ট এবং পরিস্থিতিগুলোর উদাহরণ দিন যা সত্যিই আপনার দক্ষতাকে আলাদা করে তুলেছে। দেখান কিভাবে আপনার দক্ষতা আপনার শেষ কোম্পানীকে উপকৃত করতে সাহায্য করেছে।

 

) আপনার নেটওয়ার্ক এবং রেফারেন্স ব্যবহার করুনঃ- নেটওয়ার্ক একটি সফল কাজ বা চাকরি খোঁজার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। বর্তমানে বেশিরভাগ চাকরিই নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে পাওয়া যায়, তা অনলাইনে হোক বা ব্যক্তিগতভাবেই হোক। কেননা আমরা কেউই জানি না কে, কখন আপনাকে আপনার পরবর্তী পজিশন খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে।

চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে রেফারেন্সও অনেক গুরুত্বপূর্ণ, এবং নিয়োগকর্তারা সেগুলো পরীক্ষা করে। অফিসের বস, সরকারি-বেসরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সহকর্মী, ক্লায়েন্ট এদের রেফারেন্স ব্যবহার করতে পারেন।

 

) নির্ভরযোগ্য রেফারেন্সের একটি তালিকা তৈরি করুনঃ- যেকোনো চাকরিতে আবেদন করার আগে, রেফারেন্সের একটি তালিকা তৈরি করুন এবং সেই ব্যক্তিদের কাছে জানিয়ে রাখুন যাতে তারা আপনার রেফারেন্সগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত হতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের জানিয়ে রাখুন যে আপনি কিছু কোম্পানিতে আবেদন করছেন যারা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। মূলত যাদের রেফারেন্স দিবেন তারা এমন লোক হওয়া উচিত যারা আপনাকে নেটওয়ার্কিং, অতীতের সহকর্মী বা অন্য কেউ যারা আপনার কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে কথা বলতে পারে।

 

) ধৈর্যশীল হউনঃ- মনে রাখবেন চাকরি খোঁজাটা আপনার মনে হতে পারে আপনি একটি মাল্টিটাস্কিং গেম খেলছেন। আপনি যখন একজন সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাকে প্রভাবিত করতে চান তখন আপনাকে অনেক কিছুর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে।

আপনি অনলাইনে একটি চাকরির জন্য আবেদন জমা দেওয়ার আগে বা একটি কভার লেটার লেখার সময় বা ধন্যবাদ নোট ইমেল করার আগে, টাইপিংয়ের সময় সাবধানে টাইপিং করুন এবং টাইপিং শেষ হলে লেখাটি পড়তে ভুলবেন না। বিশেষ করে, আপনি যে কোম্পানীতে বা সংস্থায় আবেদন করছেন তার নামের বানান এবং নিয়োগকর্তার নাম, পদের নাম, তারিখ সঠিকভাবে লিখেছেন কিনা তা পরীক্ষা করুন।

 

) আত্মবিশ্বাসী body language অনুশীলন করুনঃ- চাকরির ইন্টারভিউতে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করা এবং দ্রুত চাকরি পাওয়ার একটা উপায় হতে পারে। আপনার চাকরির ইন্টারভিউ ব্যক্তিগতভাবে হোক বা ভিডিওতে হোক, ভাইভার অনুশীলন করুন যতটা আপনি সাক্ষাৎকারের প্রশ্নের উত্তরগুলো অনুশীলন করেন। অস্থিরতা এড়িয়ে চলুন, আপনার ভঙ্গিতে মনোযোগ দিন এবং আত্মবিশ্বাসী আচরণের জন্য ধারাবাহিকভাবে চোখের সাথে চোখের যোগাযোগ বজায় রাখুন। তথা চোখে চোখ রেখে কথা বলার চেষ্টা করুন।

 

১০) ইন্টারভিউয়ারের সাথেই থাকুনঃ- নিয়োগকারী পরিচালক এবং নিয়োগকর্তারা জানতে চান যে তারা যা বলছেন সেগুলো আপনি শুনছেন এবং আগ্রহী। প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন এবং আপনি কোনও উত্তর সম্পর্কে না জানলে বলে ভয় পাবেন না। আপনি সবকিছু না জানলেও দুর্দান্ত সাক্ষাৎকার পাওয়া যে এখনও সম্ভব সেটা নিয়োগকর্তাদের বুঝতে দিন। এমনকি এটি নিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে পারে যে আপনি কেবল দ্রুত কাজটি পাওয়ার চেষ্টা করার পরিবর্তে আপনার দক্ষতার সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করছেন।

আপনার চাকরির পাওয়া এবং আগ্রহী দেখানোর অন্যতম সেরা উপায় ' সক্রিয় হওয়া. সংস্থার ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করুন, কোম্পানী বা সংস্থার ভিশন/মিশন পড়ুন, সোশ্যাল পেজ থাকলে সেটাতে ঢুঁ মারুন।

 

চাকরির দুর্মূল্যের এই বাজারে, দ্রুত একটি চাকরি পাওয়া সম্ভব, বিশেষত যদি আপনি নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য সময় নেন। নিজেকে আপ টু ডেট রাখুন আত্মবিশ্বাসী হউন, এবং সামনের যে কোনও বাধা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকুন। এই ১০ টিপস যদি আপনি ভালো মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনি দ্রুতই চাকরির পাবেন ইনশাল্লাহ্।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন