বুধ গ্রহে লবণের হিমবাহ

 

বুধগ্রহ ইংরেজি তে যার নাম Mercury (মার্কারি)। এই গ্রহটি সৌরজগতের প্রথম এবং ক্ষুদ্রতম গ্রহ। এটি সূর্যের সর্বাপেক্ষা নিকটতম গ্রহ। এর কোনো উপগ্রহ নাই। বুধগ্রহ সূর্যকে প্রতি ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী থেকে এই গ্রহ সহজে দেখা যায় না, কারণ সূর্যের সাথে এর বৃহত্তম কৌণিক পার্থক্য হচ্ছে মাত্র ২৮.৩ ডিগ্রী। কেবল সকাল ও সন্ধ্যার ক্ষীণ আলোয় এটি দৃশ্যমান হয়।

ভৌত বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে বুধ অনেকটা চাঁদের মতো কারণ চাঁদের মতো এই গ্রহেও রয়েছে প্রচুর খাদ। গ্রহটির কোনো স্থিতিশীল বায়ুমণ্ডল নেই, নেই কোনো প্রাকৃতিক উপগ্রহ। বুধের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৯০ থেকে ৭০০ কেলভিনের মধ্যে থাকে। সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান হচ্ছে অর্ধসৌর বিন্দু এবং শীতলতম স্থান হল এর মেরুর নিকটে অবস্থিত খাদসমূহের নিম্ন বিন্দু। বুধগ্রহ পৃথিবীর মতো একটি পাথুরে বস্তু। সৌরজগতের বৃহত্তম প্রাকৃতিক উপগ্রহ, গ্যানিমিড এবং টাইটানের তুলনায় বুধ ছোট।

 

সৌরজগতের অন্যতম উত্তপ্ত গ্রহ বুধ। অথচ সম্প্রতি এই বুধগ্রহে  লবণের হিমবাহের খোঁজ পেয়েছেন গ্রহবিজ্ঞানীরা। নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযানের বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে বুধ গ্রহের উত্তর গোলার্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ মিলেছে। মেসেঞ্জার মহাকাশযানের সংগ্রহ করা তথ্য পর্যবেক্ষণ করে নতুন একটি গবেষণাপত্র প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

 

এই বুধ গ্রহের উত্তর মেরুর কাছে থাকা বড় বড় খাদে লবণাক্ত হিমবাহের খোঁজ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। শুধু তাই নয়, বুধ গ্রহের এসব অঞ্চলে প্রাণের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন তাঁরা।

 

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনাভিত্তিক অলাভজনক প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউটের গ্রহবিজ্ঞানী অ্যালেক্সিস রদ্রিগেজ বলেন, ‘বুধ গ্রহে আমরা লবণের হিমবাহের খোঁজ পেয়েছি। এর আগে প্লুটো গ্রহে নাইট্রোজেন হিমবাহের খোঁজ মিলেছে। বুধ গ্রহে রাডিটলাদি ও এমিনেস্কু নামের দুটি খাদ রয়েছে। এখানেই লবণের হিমবাহের অবস্থান। আমরা পৃথিবীতে যে আইসবার্গ বা হিমবাহ দেখি, বুধ গ্রহের হিমবাহ তেমন নয়।

 

বুধ গ্রহে হিমবাহের সন্ধান পাওয়াকে আশ্চর্যজনক ঘটনা হিসেবেই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, বুধ গ্রহের ভর পৃথিবীর মাত্র ৫.৫ শতাংশ। বুধ গ্রহ বলা যায় একেবারেই ওজনহীন, যেন তুলার মতো শূন্যে ভাসছে। শুধু তাই নয়, বুধের সবই উত্তপ্ত। সেখানে লবণের প্রবাহ এক বিলিয়ন বছরের বেশি সময় ধরে চলা উদ্বায়ীকে সংরক্ষণ করছে। বুধ গ্রহের ওপর সূর্যের তাপ অনেক বেশি। সেই তাপ থেকে আশ্রয় নিয়ে ভূগর্ভস্থ প্রাণের বিকাশ ঘটতে পারে।

 

হিমবাহের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা বুধ গ্রহ সম্পর্কে একটি দীর্ঘস্থায়ী রহস্যের সমাধান করেছে। আগে ধারণা করা হতো, বুধ গ্রহের ছোট ছোট খাদ নানা উদ্বায়ী পদার্থে পূর্ণ ছিল। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী রদ্রিগেজ বলেন, ‘সম্ভবত বুধ গ্রহে আগে কোনো হ্রদ ছিল। বুধ গ্রহের বয়স যখন কম তখন ঘন লবণাক্ত বাষ্প আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তর থেকে বেরিয়ে আসার কারণে এসব হিমবাহ তৈরি হতে পারে। বুধ গ্রহের পৃষ্ঠের নিচে কী লুকিয়ে থাকতে পারে তা নিয়ে বড় পরিসরে গবেষণার কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা।

 

সূত্র: লাইভসায়েন্স

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন