নতুনদের জন্য বিনিয়োগ পরামর্শঃ কিভাবে শুরু করবেন

অর্থ থাকলেই কিন্তু সবাই তা বিনিয়োগ করতে পারে না।কারণটা হলো অনেকেই জানেই না যে, শুরুটা কিভাবে করবে, কোথা থেকে শুরু করবে? টাকা বিনিয়োগ করার মতো অনেক অপশন আছে দেশে। কিন্তু তার জন্য সুচিন্তা থাকার পাশাপাশি সুবুদ্ধিও থাকাটা খুবই জরুরী।


প্রিয় পাঠক আজকে আলোচনা করবো বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে এবং কিভাবে শুরু করতে পারেন সে সম্পর্কে কিছু পরামর্শও দিতে চাই।

বিশেষতআমি বিনিয়োগের সাফল্যের নীতি তুলে ধরতে চাই আজকের লেখায়। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা ' যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিনিয়োগ শুরু করা।

আপনি যত আগে বিনিয়োগ শুরু করবেন, ততো তাড়াতাড়ি আপনি ভুল করতে পারেন এবং আবার সেই ভুলগুলো থেকে শিখতেও পারেন এবং এক্ষেত্রে আপনার ঝুঁকি সহনশীলতাও বেশি হবে। বিনিয়োগের কিছু প্রাথমিক নীতি আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো আজ।

 

) আগে নিজেকে পরিশোধ করুনঃ বিনিয়োগ কোথায় করবেন এবং কিভাবে করবেন এটা যদি কোথাও শিখতে চান কিংবা কোন বই পড়ে যদি জানতে চান তবে আপনি প্রথম যে বাক্যটি শিখবেন তা হলো- ‘বিনিয়োগের জন্য আপনার অর্থের প্রয়োজন আপনি বর্তমানে যে পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেন না কেন, আপনার একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার যে আপনি যা আয় করেন তার থেকে নূন্যতম ১০% শতাংশ আপনি নিবেন। আপনার এই অর্থ সঞ্চয় বা বিনিয়োগের অ্যাকাউন্টে রাখা দরকার যা আপনি কখনো ব্যয় করবেন না। আপনি যদি মনে করেন যে আপনি বিনিয়োগের মতো অবস্থানে নেই তবে আপনার আর্থিক পরিকল্পনা আরও ভালভাবে সাজিয়ে নিতে হবে, পরিচালনা করতে হবে। কারণ হচ্ছে কি আপনি যে অবস্থানে এখন আছেন হয়তো পরবর্তী মাসে এই অবস্থানে নাও থাকতে পারেন।

প্রথমে নিজেকে পরিশোধ করার জন্য, আপনাকে আরও বেশি পরিমাণ অর্থোপার্জন করতে হবে, যাতে আপনার ইতিবাচক নগদ অর্থ প্রবাহ থাকে, কিংবা আপনার নিজের ব্যয় হ্রাস করতে হবে। জন্য স্যাকক্রিফাইস করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনার বর্তমান জীবনযাত্রার দিকে তাকান এবং নিজের জন্য একটি বাজেট সেট করুন যে আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বাজেটের বাইরে কোন অর্থ ব্যয় করবেন না। এবং বাকীটা আপনি নিজের জন্য অর্থ প্রদান করবেন। আপনার আপদকালীন সময়ে যে জরুরি তহবিল রয়েছে তা আগে নিশ্চিত করুন।

) নিজেকে বিনিয়োগ করুনঃ দেখুন অর্থ বিনিয়োগ করার আগে আপনার উচিৎ হবে নিজেকে বিনিয়োগ করা। হয়তো অবাক হচ্ছেন শুনে। এক্ষেত্রে আপনি যে বিনিয়োগ করতে পারেন তা ' নিজের মধ্যে - আপনার জ্ঞানকে বিনিয়োগ করা। আপনার দক্ষতা, জ্ঞান, আত্মবিশ্বাস, বিপণন ইত্যাদি বিকাশ করা। বিশ্বের সবচেয়ে সফল ব্যক্তিরা এটি বুঝতে পারেন। আপনি যদি নিজের মধ্যে বিনিয়োগ করতে পারেন তবে এটিই আপনাকে সর্বোচ্চ আয় প্রদান করবে।

) ব্যবসায় বিনিয়োগ করুনঃ ব্যবসায়ের সাফল্যের ক্ষেত্রে কিন্তু অনেক উচ্চ সম্ভাবনা থাকে কারণ এই ব্যবসা আপনি এটা নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনি যত বেশি নিজেকে উন্নত করবেন তত বেশি আপনার ব্যবসায় সফলতা আসবে। নিজের উপর চ্যালেঞ্জ রেখে এবং কোন ব্যবসায় অর্থ বিনিয়োগে বৃদ্ধির উচ্চ সম্ভাবনা আছে এমন ব্যবসা দেখে যদি আপনি অর্থ বিনিয়োগ করেন তবে এটি আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা কিন্তু অনেক বেড়ে যাবে এবং আপনার জন্য অনেক কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে পারেন, প্রকাশনা ব্যবসা করতে পারেন, অ্যাফিলিয়েটেট মার্কেটিং করতে পারেন, একটি অ্যাপ তৈরি করতে পারেন, সফটওয়্যার ডেভেলপ এর ব্যবসা করতে পারেন ইত্যাদি।

আপনি বিভিন্ন বিনিয়োগের বিভিন্ন উপায় যেমন,(স্টক, রিয়েল এস্টেট, লোন প্রদান,শেয়ার মার্কেট, বন্ড ইত্যাদি) খোঁজ করতে পারেন। আর এই খাতগুলো আপনার অর্থ বিনিয়োগ করলে লাভের সম্ভাবনাও থাকে প্রচুর।

) দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগঃ বিনিয়োগ করে দ্রুত ধনী হয়ে যাবেন এমন মানসিকতা নিজের মধ্যে কখনো রাখবেন না। আপনি মাসিক ভিত্তিতে বিনিয়োগ করতে পারেন। আর এজন্য ব্যাংক হতে পারে আপনার জন্য উত্তম। ব্যাংকে আপনি বিভিন্ন স্কিম খুলে টাকা রাখতে পারেন। আমরা জানি শেয়ার বাজার সর্বদা অস্থির, তার মানে এই নয় যে, আপনি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে সেখান থেকে বেরিয়ে যাবেন। বিনিয়োগ করুন দীর্ঘমেয়াদী। এবং খুব দ্রুতই সেখান থেকে কোন লাভের আশা করবেন না। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ আপনার নিজের এবং পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ।



বিনিয়োগ নিয়ে ওয়ারেন বাফেট এর একটা সেরা উক্তি দিয়ে আজকের লেখাটি শেষ করবো। তিনি বলেছিলেন- “আমি এগারো বছর বয়সে আমার প্রথম বিনিয়োগ করেছি। ততক্ষণে আমি আমার জীবন নষ্ট করছি।আপনি কি ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত? আপনার এই সিদ্ধান্তই হবে আপনার জীবনের সেরা সিদ্ধান্ত!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন