বাজারে আসছে উড়ন্ত গাড়ি

ভবিষ্যতে বিজ্ঞান আমাদের কোথায় নিয়ে যেতে পারে কিংবা কীভাবে বদলে দিতে পারে জীবন? আপনি কি এই মূহূর্তে কল্পনা করতে পারেন? জানি পারবেন না। কেননা বিজ্ঞান মাঝেমধ্যে কল্পনার বাইরের এমন কিছু অবিস্কার করে যা হতবাক করে দেয় বিশ্ববাসীকে।


১৯৮২ সালের ছবি ব্লেড রানারে দেখানো হয়েছিল ভবিষ্যতের লস এঞ্জেলস শহরে আকাশের মহাসড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে উড়ন্ত যানবাহন। এটা গেলা মুভির কথা। বাস্তবেও কিন্তু তাই হয়েছে। প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুতগতিতে ছুটে চলেছে হয়ত হলিউডের ছবি নির্মাতারা তা তখন কল্পনাও করতে পারেননি। আকাশে উড়তে পারে তাদের কল্পনার এমন অনেক যানবাহন এখনও রূপালি পর্দায় দেখা কল্পলোকের জিনিস হয়ে থাকলেও উড়ন্ত গাড়ি কিন্তু এখন বাস্তবতায় রূপ পেয়েছে।রশুনতে অবাক লাগলেও এয়ার কার নামের গাড়িটি এরই মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ৭০ ঘণ্টা আকাশে ওড়ার পাশাপাশি ২০০ বার উড্ডয়ন অবতরণ করেছে।


উড়ন্ত গাড়িতে পরিবর্তনের জন্য কারও সাহায্যের প্রয়োজন নেই।  গাড়ির ভেতর রয়েছে কয়েকটি সুইচ যেগুলিতে চাপ দিলেই হঠাৎ এই গাড়ির মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসবে ডানা, মুহূর্তের মধ্যেই চারচাকা গাড়িটি পরিণত হয়ে যাবে একটি বিমানে।

 

আর গাড়িটি বিমানে বিমানে পরিণত হতে সময় লাগবে মাত্র মিনিট ১৫ সেকেন্ড। আকাশে ওড়ার জন্য পাইলটেরও দরকার নেই। গাড়ির চালকই যথেষ্ট।

 

নিজের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করতে উড়ন্ত গাড়িটি তৈরি করেছেন স্লোভাকিয়ার স্টেফান ক্লেইন। জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ক্লেইন ভিশন নামের প্রতিষ্ঠানও। গত বছরের জুন মাসে পরীক্ষামূলকভাবে ৩৫ মিনিট উড়ন্ত গাড়ি নিয়ে আকাশে উড়েছিলেন তিনি।

 

এর আগেও এই এয়ারকারটিকে গত বছর অক্টোবর মাসে প্রথমবার সফলভাবে উড়ানের ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছিলো। এই এয়ারকারটির ওড়ার ভিডিও দেখে অনেকেরই মনে পড়ছে হ্যারি পটার অ্যান্ড চেম্বার অব সিক্রেটস-এর উড়ন্ত গাড়ির কথা।গাড়িটি দেখে মনে হচ্ছে কল্পনা যেন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।



এই এয়ারকার টি স্লোভাকিয়ার (Slovakia) নিত্রা বিমানবন্দর (Nitra Airport) থেকে ব্রাতিস্লাভা বিমানবন্দরে (Bratislava Airport) উড়ে যায়। এয়ারকারটির এই গন্তব্য যেতে মোট সময় লাগে ৩৫ মিনিট।


এই গাড়িটিতে রয়েছে ১৬০ হর্সপাওয়ারের বিএমডব্লিউ ইঞ্জিন। এখনও পর্যন্ত এই এয়ারকারটি সর্বোচ্চ ৮২০০ ফুট উচ্চতায় উড়েছে ।এয়ারকারটি সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৯০ কিমি। কিন্তু এখন এটি প্রোটোটাইপ (Prototype), সংস্থা জানিয়েছে পরবর্তী সংস্করণে আরও শক্তিশালী ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। এই এয়ারকারটি এখনো পর্যন্ত মোট ৪০ মিনিট উড়েছে। খানিকটা স্পোর্টসকারের মতো এই গাড়িতে জন বসতে পারবেন। এবং গাড়িটি ২০০ কেজি পর্যন্ত মাল বহন করতে পারবে।

 

স্লোভাকিয়ায় ছাড়পত্র পাওয়ায় ধরনের বাহন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। টেস্ট ফ্লাইটের পাইলট স্টেফান ক্লেইন বলেন, ‘এয়ার কার হিসেবে ছাড়পত্র পাওয়ায় এরকম গাড়ির ব্যাপক ব্যবহারের পথ খুলে গেল।তিনি জানান, তার কোম্পানি আগামী ১২ মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবেএয়ার কারউৎপাদনে যাবে।

 

এদিকে রয়্যাল অ্যারোনটিক্যাল সোসাইটির এয়ারওয়ার্ডিনেস অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিশেষজ্ঞ গ্রুপের চেয়ারম্যান কিরিয়াকোস কৌরোসিস সিএনএনকে ব্যাপারে বলেছেন, ধরনের যানকে এর আগেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এবারের গাড়িটির নির্মাতা কোম্পানির যদি ব্যবসায়ীক উদ্দেশ্য থাকে, তাহলেই কেবল ধরনের যান বাজারে আসতে পারে। কৌরোসিস পূর্বাভাস দিয়ে বলেন, ধরনের এয়ার কারের মতো বাহন একদিন হেলিকপ্টারের বিকল্প হয়ে উঠবে।

 

তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস অদূর ভবিষ্যতে আমরা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ চালিত বা কমপক্ষে হাইব্রিড ইঞ্জিনের গাড়ি দেখতে পাব, যেগুলো এভাবে রূপান্তরিত হতে পারবে। ধরনের বাহন আমাদের পরিবেশগত টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন