লাভ হরমোন বা অক্সিটোসিন হল স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে প্রাপ্ত একটি হরমোন। এটি স্তন্যপায়ীদের মস্তিষ্কে কাজ করে। মানবদেহে এটি নারীদের প্রজননের সময় নির্গত হয়, বিশেষ করে সন্তান প্রসবের সময় এবং প্রসবের পরে।
প্রেমে পড়া থেকে শুরু করে শারীরিক সম্পর্ক, সার্বিকভাবে সামাজিক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই অক্সিটিসিন হরমোন, যা সাধারণত ‘লাভ হরমোন’ নামে পরিচিত।
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হলে মস্তিষ্কে ডোপামিন আর সেরোটোনিনের পাশাপাশি অক্সিটোসিনের নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে প্রেমানুভূতি তৈরি হয়। নারীদের শরীরের অক্সিটোসিনের পরিমাণ বেশি থাকে। সন্তান জন্মদানের সময় অক্সিটোসিন প্রচুর পরিমাণে নিঃসৃত হয়ে জরায়ুর সংকোচন ঘটায়, যা সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করতে সাহায্য করে। আবার সন্তান জন্মের পর স্তন থেকে মাতৃদুগ্ধ নিঃসরণ করায়। শারীরিক সম্পর্কের সময় অক্সিটোসিনের নিঃসরণ হয়, যা সঙ্গীর প্রতি গভীর আস্থা ও ভালোবাসার বন্ধনকে দৃঢ় করে তোলে।
সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক, সন্তান জন্ম—এসবের ওপর ‘লাভ হরমোন’ অক্সিটোসিনের প্রভাব রয়েছে বিগত ৩০ বছর ধরে এমনই ধারণা প্রচলিত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় লাভ হরমোন সম্পর্কে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর ওপর চালানো নতুন এক গবেষণা বলছে, এই তথ্যে গরমিল রয়েছে। এসব সম্পর্ক ও আচরণ শুধু অক্সিটোসিন হরমোনের ওপর নির্ভরশীল নয়।
প্রেইরি ভোল নামক এক প্রাণীর ওপর অক্সিটোসিন হরমোন প্রয়োগ করে একটি গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। প্রেইরি ভোল আদতে ইদুরের একটি বিশেষ প্রজাতি। মূলত উত্তর এবং মধ্য আমেরিকায় এই প্রাণীটিকে দেখা যায়। এই প্রাণীর ওপরে অক্সিটোসিন হরমোন প্রয়োগ করে বিশেষ গবেষণা চালান বিজ্ঞানীরা।
সেই গবেষণায় দেখা যায়, প্রেম, শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তান প্রতিপালনের জন্য অক্সিটোসিন হরমোনের সাহায্য নিতে হচ্ছে না প্রিইরি ভোলকে, যা দেখে হতবাক হয়ে যান গবেষকরা। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সিটোসিন হরমোনের কার্যকারিতা কম থাকলেও প্রাণীগুলো নিজের জোড় তৈরি করতে পেরেছে। সন্তান জন্ম ও লালন–পালনেও নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। আগে ধারণা করা হতো, এসব আচরণ অক্সিটোসিন হরমোনের ওপর নির্ভরশীল।
এর আগের গবেষণায় এসব প্রাণীকে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ বন্ধের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। সে সময় দেখা গেছে, প্রাণীগুলো আর জোড়া তৈরি করতে পারছে না। সন্তানদের বুকের দুধ পান করাতে পারছে না মা।
মনোচিকিৎসক দেবানন্দ মানোলি ও স্নায়ু জীববিজ্ঞানী নিরাও শাহ অক্সিটোসিন হরমোনের ওপর কাজ না করে ভোলগুলোর জিনগত পরিবর্তন করেন। এরপর পরিবর্তিত পুরুষ ও নারী ভোলের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবর্তিত ভোলগুলো জিন পরিবর্তন করা হয়নি এমন ভোলগুলোর সঙ্গে জুটি বাঁধতে পেরেছে। পরিবর্তিত নারী ভোলগুলো সন্তানের জন্ম দিতে ও লালন–পালন করতে পারছে।
সান ফ্রান্সিসকোতে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সহকারী অধ্যাপক মানোলি বলেন, তাঁদের কাছে এটি খুবই বিস্ময়কর মনে হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে মনে হয়েছে, জোড় বাঁধা বা সন্তান লালন–পালনের ক্ষেত্রে অক্সিটোসিন হরমোনই প্রধান নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন