No Fly Zone!!! বিশ্বের যে স্থানগুলোর ওপর দিয়ে প্লেন চলাচল নিষিদ্ধ

বিশ্বের একদেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াতের জন্য বিমান হলো জনপ্রিয় একটি পরিবহন। মূলত অল্প সময় ও নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মানুষ বিমানকে বেঁচে নেয়। বিমানে করে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই আপনি যেতে পারেন যদি আপনার পাসপোর্ট - ভিসা থাকে। তবে আপনি জানেন কি বিশ্বে এমন কিছু স্থান আছে যার উপর দিয়ে প্লেন চলাচল করতে পারে না। ঐসব এলাকা নো ফ্লাই জোন হিসাবে পরিচিত। অর্থাৎ ওইসব স্থানের উপর দিয়ে প্লেন চলাচল একেবারেই নিষিদ্ধ। বিশ্বের এমনই কিছু স্থান অর্থাৎ নো ফ্লাই জোন নিয়ে আজকের এই লিখা । প্রিয় পাঠক বিশ্বের যে ৬ স্থানের ওপর দিয়ে প্লেন উড়তে পারে না সেগুলো হলো- 

 

 ১। পবিত্র মক্কা শরীফঃ- বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানদের কাছে পবিত্র এক স্থানের নাম মক্কা । প্রতি বছর বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লী হজ্জ্ব করতে মক্কায় যান। জানেন কি, মক্কার উপর দিয়েও প্লেন চলাচলের অনুমতি নেই। নিরাপত্তার কারনে হারাম শরীফের আশেপাশের আকাশে বিমান চলাচল নিষিদ্ধ। এটি সৌদি বিমানবাহিনীর ঘোষিত নো ফ্লাই জোন। যদি কোনো পাইলট ভুলক্রমেও সে পথে চলে যান, তাহলে তাকে গুনতে হয় জরিমানা।

মক্কা শরীফ (ছবিঃ- সংগৃহীত) 

 

২। বাকিংহাম প্যালেসঃ- বাকিংহাম প্যালেস যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর মধ্যে একটি। রানীর বাসভবন এবং তার সকল সরকারি কর্মকর্তার অফিস এটি। এমনকি ব্রিটেনের সর্বসাধারণের জন্যও এখানের বেশক’টি সড়ক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানকার রাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাকিংহাম প্রাসাদের উপর দিয়ে প্লেন চলাচল নিষিদ্ধ। এছাড়া রাজপরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উইন্ডসর ক্যাসেলের ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ ওড়ানোর অনুমতি নেই। যুক্তরাজ্যে নো-ফ্লাই জোন আছে এমন আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান হল ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট, সংসদের হাউস ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন।

বাকিংহাম প্যালেস (ছবিঃ- সংগৃহীত) 

 

৩। তাজমহলঃ- তাজমহল বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক দর্শনীয় স্থান। তাজমহল তৈরি করতে সময় লেগেছিল পুরো ২১ বছর। ইউনেস্কো ভবনটির গুরুত্ব স্বীকার করে ও ১৯৮৩ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে মনোনীত করে। তাজমহলের অঞ্চলটি এতটাই নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে যে, সেখানকার ৫০০ মিটারের মধ্যে কোনো যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ভারত সরকার ২০০৬ সালে এই অঞ্চলে একটি নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা করে ভবনটিকে সুরক্ষিত করার জন্য। সেই থেকে আগ্রার ওপর দিয়ে বিমান চলাচল পুরোপুরি নিষিদ্ধ।

তাজমহল (ছবিঃ- সংগৃহীত) 

 

৪। তিব্বতঃ- পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু এলাকা হিসেবে ধরা হয় তিব্বতকে। তিব্বত এশিয়ায় অবস্থিত। এখানকার গড় উচ্চতা সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৬০০০ ফুট ওপরে। এই উচ্চতা দিয়ে অধিকাংশ বাণিজ্যিক বিমান স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারলেও, জরুরি অবতরণে সমস্যা থেকে যায়। বিমান চলাচলের চেয়েও যাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়াটা বেশি জরুরি বলে পুরো তিব্বতে পাঁচটি বিমানবন্দরের অঞ্চল বাদে আর কোথাও বিমান চলাচল করতে দেখা যায় না।

তিব্বত (ছবিঃ- সংগৃহীত) 

 

৫। ডিজনি থিম পার্কঃ- প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে হাজার-হাজার দর্শনার্থী এসে ভিড় করেন ডিজনি থিম পার্ক এ। ফ্লোরিডা’র ওয়াল্ট ডিজনি ওয়ার্ল্ড এবং ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ডিজনিল্যান্ডের উপর দিয়ে বিমান ওড়া নিষেধ। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে জঙ্গি হামলা হওয়ার পরপরই ছবির মতো সুন্দর এই পার্কসহ বেশ কয়েকটি পর্যটনকেন্দ্রে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই বিমান চলাচল নিষিদ্ধ হয়েছে। একাধিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে শুধুমাত্র ৩০০০ ফিট এর বেশি উচ্চতা দিয়ে উড়ে যাওয়ার শর্তেই কোনো বিমান এই রুট ব্যবহার করতে পারবে। থিম পার্ককে ঘিরে প্রায় ৩ মাইল পর্যন্ত জায়গাজুড়ে এই নো ফ্লাই জোন গড়ে তোলা হয়েছে।

ডিজনি পার্ক (ছবিঃ- সংগৃহীত) 

 

৬। পেরুর মাচু পিচুঃ- ইতিহাস সম্পর্কে জানেন আর ‘মাচু পিচু’ এর নাম শোনেননি এমন মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে খুব কমই আছে। পেরুর মাচু পিচু হলো ইনকা সভ্যতার সকল অবশিষ্ট ভবন ও নির্মাণশৈলী নিয়ে গভীর জঙ্গল এবং পাহাড়-পর্বতের মাঝে গড়ে ওঠা অন্যতম সংরক্ষিত অঞ্চল। অত্যন্ত সুরক্ষিত এই অঞ্চলটিতে এমন সব বিরল বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদ আছে যা বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। ইউনেস্কো এই অঞ্চলকে বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়ার পর ২০০৬ সাল থেকে পেরু সরকার এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে সকল প্রকার বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়।

মাচু পিচু (ছবিঃ- সংগৃহীত)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন